২০০৫ সালে ‘এবং ক্লাসের বাইরে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা দিয়ে টেলিভিশনে মাসুমা রহমান নাবিলার অভিষেক। সময়ের পরিক্রমায় টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্টেজ শো আর বিপিএলের মতো বড় আসর উপস্থাপনা করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন ‘স্টার শিপ ফিউশন কিচেন’। নাবিলা জানালেন, রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন ১০-১২ বছর পর। এর মধ্যে তাঁর জীবনে বড় একটা পরিবর্তন ঘটেছে, ২০১৮ সালে বিয়ে করেছেন নাবিলা।

বিয়ে আগে খেতে পছন্দ করলেও খুব একটা রান্না করতেন না। তবে বিয়ের পর রান্নাও বেশ উপভোগ করছেন। তাঁর রান্না করা খাবার খেয়ে স্বামী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি, বোন আর বন্ধুরাও মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তাই বিয়ের পর রান্নাবিষয়ক এমন একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা বেশ উপভোগও করেছেন। নাবিলা বললেন, ‘প্রাত্যহিক জীবনে আমি যদি রান্না না–ও করি, মেনু কী হবে, এটা ঠিক করাটা আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। যে কারণে আমি এখন রান্না ব্যাপারটা অনেক বুঝি, উপভোগও করি। শেষ কবে ফিউশন কিচেন টাইপের অনুষ্ঠান করেছি, মনে নেই। আর যখন করেছি, তখন রান্না ব্যাপারটা আমার কাছে অন্ধকারের মতো ছিল। উপস্থাপনা করার জন্য করেছি। তবে এখন যখন করছি, তা আমার উপস্থাপনায় বাড়তি কিছু যোগ করছে।’

পথের ধারে পছন্দের খাবার

কোনো বাছবিচার নেই, সব ধরনের খাবার খান নাবিলা। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ ফুটপাতের খাবার। নাবিলা বললেন, ‘খাবার মজা হওয়াটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের থাকে না, খাওয়া নিয়ে বাছবিচার করেন, এই যেমন কেউ বড় মাছ খান না, ছোট মাছ খান না, অমুক জিনিস খান না। তমুক জিনিস খান না। আমার তা নেই, আমি সবই খাই। সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি ফুচকা। ভেলপুরি, চটপটিও আমার খুব পছন্দ।’

নাবিলার রান্না করা খাবারের মধ্যে পরিবারের একেকজনের একেক পদ পছন্দ। বললেন, ‘রিসেন্টলি নেহারি বানিয়েছিলাম। সবাই খেয়ে পছন্দ করেছে। রিসেন্টলি আমার বোনের বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার আগে আবদার করে, চিকেন মাশরুম দিয়ে তৈরি ইতালিয়ান একটা রেসিপি করি, ওইটা তার খুব পছন্দ। আমার হাজব্যান্ড তেহারি যেমন পছন্দ করেন, তেমনি অ্যারাবিক ফুড খ্যাপসাও পছন্দ করেন। আমার শ্বশুরেরও পছন্দ। স্মিহা মা–বাবার মতো ভোজনরসিক হয়ে ওঠেনি। তবে সে মায়ের হাতে রান্না করা পাশতা বানালে মজা করে খায়।’

দেশে সাবাব, বাইরে মাথুর

২০ বছর ধরে উপস্থাপনায় আছেন নাবিলা। উপস্থাপনার পর মডেলিংয়ে নাম লেখান। এরপর অভিনয়। নাবিলা যখন উপস্থাপনা করেন, তখন হাতে গোনা কয়েকজন এই মাধ্যমে কাজ করতেন। এখন উপস্থাপনা অনেকে করলেও বৈচিত্র্য খুঁজে পান না বলে জানালেন তিনি। বললেন, ‘সত্যি বলতে, যাঁরা এখন উপস্থাপনা করছেন, তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব পছন্দ করি। ভালোও বাসি। কিন্তু বৈচিত্র্য নেই। ওদের দোষ নেই, আবার আছেও। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যও নেই। দোষ এই জায়গা থেকে বলব, যেহেতু বৈচিত্র্য নেই, একই উপস্থাপককে দেখি চার-পাঁচ চ্যানেলে একই ধরনের উপস্থাপনা চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে তারাও নিজের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারে না। একসঙ্গে অনেক কাজ করলে ক্যামেরায় ক্লান্তি ধরা পড়ে। মাঝেমধ্যে যখন টেলিভিশন দেখি, বুঝতে পারি, উপস্থাপকের মধ্যে কোনো প্রাণশক্তি নেই।’

তবে এসবের মধ্যেও একজনের উপস্থাপনা ভালো লাগে, জানালেন নাবিলা, ‘এখনকার মধ্যে যদি একজনের নাম বলি, রাফসান সাবাবের কথা বলতেই হয়। খুব ভালো করছে। তার কাজের বৈচিত্র্যের কারণ, একটাই অনুষ্ঠান করছে এবং নেপথ্যেও নিজে কাজ করে। এ কারণে তাকে অনেকের মধ্যে আলাদা লাগে।’

দেশ–বিদেশের উপস্থাপকের প্রসঙ্গ উঠতেই নাবিলা বললেন, ‘যখন আমি শুরু করি, তখন ফারজানা ব্রাউনিয়াকে দেখেছি, তিনি চ্যানেল আইয়ে ‘লেটস মুভ’ নামে একটা অনুষ্ঠান করতেন। খুবই ভিন্ন রকম ছিল। যে এনার্জি নিয়ে কথা বলতেন, তাঁর যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল, তা দুর্দান্ত। তাঁর পরে আমরা যারা উপস্থাপনায় এসেছি, আমাদের, অ্যাটলিস্ট আমাকে (উনি) অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন। ফারজানা ব্রাউনিয়াকে দেখে একটা নতুন প্রজন্ম উপস্থাপনায় এসেছে। কনটেন্টেও তিনি অনেক বদল এনেছিলেন। তাঁকে তো অবশ্যই ভালো লাগে। এর ছাড়া দেশের বাইরের যাঁর উপস্থাপনার আমি ভক্ত, তাঁর নাম মিনি মাথুর। তাঁর ভাবভঙ্গি আমার খুব ভালো লাগত।’

এবং বনলতা সেন

উপস্থাপনা, নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটা সময় বড় পর্দায় অভিষেক। নাবিলার প্রথম সিনেমা ‘আয়নাবাজি’ মুক্তির পর তাঁকে ঘিরে চলে আলোচনা। এরপর একাধিক সিনেমায় অভিনয় করলেও গেল বছর ‘তুফান’ ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন। এ সিনেমায় দেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন নাবিলা। ‘তুফান’ সিনেমার সময়ই জানা যায়, আরেকটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছেন নাবিলা। ছবিটির নাম ‘বনলতা সেন’। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রই তিনি। তবে শুরুতে তাঁকে অন্য একটি চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

নাবিলা বললেন, ‘শুরুতে শুধু ওই চরিত্রের সারসংক্ষেপ দেওয়া হয়। আমি বলেছিলাম, পুরো স্ক্রিপ্ট দেওয়া যায় কি না। তাহলে বুঝতাম, আমার চরিত্রের উপস্থাপনটা কী রকম বা কী। তারপর পুরো চিত্রনাট্য পড়ার পর আমি তো মুগ্ধ। মনে হচ্ছে, বাহ্‌, এটা কী লিখল! পুরো গল্পটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। যা–ই হোক, আমাকে যে চরিত্রের কথা বলেছে, বিরতির পর ওই ধরনের চরিত্র দিয়ে ফিরতে চাইছিলাম না। ওনাকে সুন্দর করে বললাম, এই চরিত্রটা আমি এখন করতে চাইছি না। তবে আপনি যদি আমাকে বনলতা সেন বলতেন, তাহলে এককথায় রাজি হয়ে যেতাম (হাসি)। অনেক দিন পর তিনি আমাকে ডাকলেন। অডিশন নিলেন তিনবার।’ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা দারুণ জানিয়ে বললেন, ‘উজ্জ্বল ভাই তো অনেক বড় ক্যানভাসে কাজ করেন। তাঁর সিনেমা হচ্ছে কবিতার মতো। এত সুন্দর করে বানান, যাতে তাঁর মেধা, রুচি ও জানাটা দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *