রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরে অবস্থিত আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়টি। খোলা আকাশের নিচে প্রায় দেড় মাস ধরে ক্লাস করছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর। বিদ্যালয় তৈরির স্থান নির্ধারণ হলেও তোলা হয়নি ঘর। সেখানেই চলছে অস্থায়ী এই ক্লাস। এমন অবস্থায় আসন্ন বার্ষিক (ফাইনাল) পরীক্ষাগ্রহণ নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তায় আছেন শিক্ষকরা। আর পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমন অবস্থায় বিদ্যালয়টিতে কমেছে উপস্থিতি। বিদ্যালয়টি প্রথম শ্রেণিতে ১৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২২ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ১৪ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। এটি নদীর চরে হওয়ায় আতারপাড়া এলাকার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে এই স্কুলটিতে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল নদীগর্ভে বিলীনের কিছুদিন আগে থেকে ঝুঁকির শঙ্কায় ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে তার কিছুদিন পর থেকে অন্য জায়গায় ক্লাস শুরু হয়। তবে আমাদের দীর্ঘ দেড় মাস ঠিকমতো ক্লাস হয়নি। কিন্তু আগামী সপ্তাহে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা কেমন হবে জানি না। তবে আমাদের বিদ্যালয়ের ঘরের অভাবে স্যারেরা ক্লাস নিতে পারেননি। তবে দুই থেকে তিনটি ক্লাস হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামো ছাড়া বিদ্যালয়টি বিভিন্ন আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হলে গত ৯ অক্টোবর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয়নি। যে শিক্ষার্থীরা আসছেন তারা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছেন। উপস্থিতি কম থাকায় দুই থেকে তিনটির বেশি ক্লাস হচ্ছে না। এই বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৬ জন লেখা-পড়া করে। তাদের আগামী সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী জিহাদ ও রিফাত বলে, নদী ভাঙনের কারণে আমাদের স্কুল নেই। এখন ভাঙা স্কুলে ক্লাস হচ্ছে। তবে অনেকে আসে না। কয়েকদিন পরে পরীক্ষা। আমরা কীভাবে পরীক্ষা দেব।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক রিনা বেগম বলেন, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না। তারা খোলা আকাশের নিচে রোদে বাতাসে বসে ক্লাস করতে চায় না।

সহকারী শিক্ষক রাজু আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙনের ফলে আমাদের স্কুলটি ভেঙে গেছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বাচ্চারা ক্লাস করতে চায় না। কয়েকদিন পরে পরীক্ষা। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

এ বিষয়ে আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ না হওয়ায় ঘর তোলা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয় নিয়ে বিষয়টি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু দেড় মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সামনে পরীক্ষা, তাই কোনো উপায় না পেয়ে খোলা আকাশে নিচে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে ছেলে-মেয়েদের।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি বুবুল হাওলাদার বলেন, এক রাতের মধ্যে ভেঙে গেছে স্কুল। অস্থায়ীভাবে পাশে আমরা একটা ঘরের ভেতরে তিনটি শ্রেণির একসঙ্গে মিলে ক্লাস নিচ্ছি।

এ বিষয়ে বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে স্কুলের মালামাল রাখা হয়েছে। কোনো ঘর তোলা সম্ভাব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মামুনুর রহমান বলেন, স্কুল থেকে একটি আবেদন করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনটি পাঠিয়েছি। তবে স্থানীয়ভাবে ঘর নির্মাণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *