বন্যায় এখনো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৯ জেলার মোট ৯ লাখ ২৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ফেনীতে বন্ধ রয়েছে ১৭টি সাবস্টেশন। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ পরিস্থিতির তথ্য জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুক্রবারের চেয়ে শনিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। বন্যায় ফেনীর ১৭টি সাবস্টেশনের সবগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৬ গ্রাহকের মধ্যে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৬ গ্রাহকই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই জেলাগুলোতে কোনো সাবস্টেশন বন্ধ না হলেও ৯০৫টি ১১ কেভি ফিডারের (ডিস্ট্রবিউশন লাইন পয়েন্ট, যা সাবস্টেশন থেকে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে) মধ্যে ১০৭টি বন্ধ করা হয়েছে।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০, কুমিল্লায় ১ লাখ ৫২ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৮ হাজার এবং লক্ষ্মীপুরে ১৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত্হীন।
কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খোলা টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট শনিবার রাত ১০টায় খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গেইটগুলো ৬ ইঞ্চি খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে গেইট খোলার পরিমাণ ৬ ইঞ্চির বেশি করা হতে পারে। গতকাল শনিবার বিকালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে ভাটি অঞ্চলে জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার বিকাল পর্যন্ত হ্রদে পানির পরিমাপ ১০৭.৬৬ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যেখানে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। পানি নিষ্কাশনের জন্য সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে প্রতিটি গেটে ছয় ইঞ্চি খুলে দেওয়া হবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হবে। বৃষ্টি বা ঢলের কারণে হ্রদে পানি আরও বেড়ে গেলে গেটের খোলা অংশের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে হ্রদে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি আছে। ফলে কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে সর্বোচ্চ ২১৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি ইউনিটের মাধ্যমে ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের গেইট খুলে দিলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে ছাড়া হবে। এতে কর্ণফুলী নদীতে স্রোত বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে নদী তীরবর্তী কিছু নিচু ফসলি জমি প্লাবিত এবং চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হতে পারে।
ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচলে বিনা মূল্যে ডিজেল দেওয়ার নির্দেশ
ফেনী জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে মোবাইল অপারেটরদের জেনারেটরগুলোর ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) তিনি এ নির্দেশনা দেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফেনী জেলার ৭৮টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে প্রচুর ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় পোর্টেবল জেনারেটরে (পিজি) (৭৫ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ৩ লিটার এবং জেনারেটর (ডিজি) (৩০ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ৪ দশমিক ৪ লিটার। এই হিসাবে ৭৮টি জেনারেটরে প্রতিদিন ৬ হাজার ৫৫২ লিটার ডিজেল ব্যবহৃত হয়। যার মূল্য ৭ লাখ ১৪ হাজার ১৬৮ টাকা। ৭ দিনে দরকার হবে ৪৫ হাজার ৮৬৪ লিটার, যার মূল্য ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৬ টাকা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশনায় বিটিআরসির ফান্ড থেকে এই টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।