পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার ২৯ তম আসরে ক্রেতা দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনে মাত্র ২০ মিনিটে কাঠপেন্সিল স্কেচে জীবন্ত ছবি এঁকে দিচ্ছেন চিত্রশিল্পীরা । দর্শনার্থীরাও ক্যামেরায় উঠানো প্রিন্ট ছবির পাশাপাশি পেন্সিল স্কেচে আঁকা ছবিকে স্মৃতি করে রাখতেই চিত্র শিল্পীদের দারস্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে চোখে পড়বে বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীকে। চোখে পড়বে তারা কাঠ পেন্সিলের আঁচড় দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সামনে বসা অথবা মোবাইলের ছবি দেখি মানুষের ছবি এঁকে দিচ্ছেন।
এই আঁকিয়েরা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে যে কারো প্রতিকৃতি এঁকে দিতে পারেন।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য কাঠপেন্সিলের ছোঁয়ায় জীবন্ত প্রতিচ্ছবি আঁকছেন বেশ কয়েকজন শিল্পী।

মেলার শুরু থেকেই এই শিল্পীরা ছবি আঁকার জন্য আছেন। মোবাইল ফোনসেটে তোলা ছবি দেখে কিংবা ফোটোগ্রাফ দেখে স্কেচে ফুটিয়ে তুলছেন মানুষটিকে। আবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা মানুষটিকে দেখতে দেখতেই ছবি এঁকে দিচ্ছেন।
মেলা এখনো পুরোপুরি জমে না ওঠায় দর্শনার্থীদের মধ্যে ছবি আঁকিয়ে নেওয়া আগ্রহীদের সংখ্যা কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পী। তবে ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় হলে আগ্রহী দর্শনার্থীরা তাদের কাছে ভিড় জমান বলে জানান তারা।

মেলায় কথা হয় নিয়াজ হোসেন নামের এক চিত্রশিল্পীর সাথে। তিন জানান, ২০ বছর যাবত তিনি এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে আগারগাঁও সহ এখানের প্রতি মেলাতেই তিনি ছবি আঁকতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ছবি আঁকা যেমন আমার নেশা, তেমনি বাণিজ্য মেলায় আসাও নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কাজ পাচ্ছি। তবে শুক্রবার ও শনিবার বেশি কাজ পাওয়া যায়।

তার পাশেই ছবি আঁকছেন চিত্রশিল্পী রাশেদ মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদেই তিনি শিখেছেন। গত ১০ বছর ধরে ছবি আঁকছেন। শখের বশেই ছবি আঁকা শিখেছেন এবং এটাকে নিয়েছেন পেশা হিসেবেও। সাদাকালো একটি ছঁবির জন্য ১১ ইঞ্চি বাই ১৬ ইঞ্চি কগজে তিনি নিচ্ছেন ৬০০টাকা। ছবির আকার ভেদে ১৬/২২ ইঞ্চি ৮০০ টাকা, ১৮/২৩ ইঞ্চি ১০০০ টাকা ত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। তবে মাঝেমধ্যে কাস্টমারের তারতম্যের কারণে কম-বেশিও নিয়ে থাকেন। তবে রঙিন ছবি মেলাতে বসে আঁকা সম্ভব হয় না। এজন্য আগ্রহীদেরকে অগ্রীম অর্ডার করতে হবে।

ভোলার চিত্রশিল্পী সীমান্ত সুমন জানান, অন্যের ছবি আঁকা দেখেই ছবি আঁকার শিখেছেন । তিনি জানান, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি ছবি আঁকেন। একটি নরমাল সাদা কালো ছবি ডেলিভারি দিতে ২০ মিনিট সময় লাগে । মেলায় আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করি সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি ছবি আঁকতে পারবো। ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থী সমাগম হলে কাজের চাপ বাড়ে। মেলায় আশা দর্শনার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমরা সাধারণত ক্যামেরা ও মোবাইলে অহরহই ছবি তুলে থাকি। কিন্তু কাঠপেন্সিলে নিজের প্রতিচ্ছবি আঁকিয়ে নেওয়ার সুযোগ সব সময় হয় না। তাই এ সুযোগ কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে সাদা কালো ছবি আঁকিয়ে দিচ্ছি।

মেলায় ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার শান্তা জানান, আমার মোবাইলে,ল্যাপটপে এবং বাঁধানো, ঘরে সাঁটানো অসংখ্য ছবি আছে । কাঠ পেন্সিলে আঁকা ছবিকে স্মৃতি করে রাখতেই আজ বাণিজ্য মেলায় এসে এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।
তিনি বলেন, ১১ বাই ১৬ ইঞ্চি সাদা কাগজে কাঠ পেন্সিল দিয়ে আমার ছবি আঁকাতে ৬০০ টাকা নিয়েছে। সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট।
ডেমরা থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম জানান, ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। এখন সে বায়না করেছে পেন্সিলে তার সাদা -কালো ছবি আঁকাবে। ৮০০ টাকা দিয়ে ১৬/২২ ইঞ্চি সাইজের ছবি একই নিলাম।কাঠপেন্সিলের ছুঁয়ায় আঁকা ছবি হাতে পেয়ে সে বেশ খুশি হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *