পলাশ আর মালতীর ছোট্ট ছিমছাম সংসার। পলাশ একটি দোকানের সাধারণ কর্মচারী। মালতী অন্তঃসত্ত্বা। বিবাহবার্ষিকীতে দুজন মিলে নৌকায় ঘুরতে বের হয়। কেক কাটে, ঘোরাঘুরি করে। আর দশটা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মতো সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখে তারা। মালতী পলাশকে বলে, ‘আমাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দাও, নায়িকা শাবানার মতো সেলাই করতে করতে একটা ফ্যাক্টরি দিয়া দিমু।’ উত্তরে পলাশ বলে, ‘আমিও তাহলে জসিমের মতো একটা ঠেলাগাড়ি কিনে নিই। ঘুরে ঘুরে লেইস–ফিতা বিক্রি করি।’ তাদের এই সাজানো সংসার হঠাৎ ওলট-পালট হয়ে যায়। অন্যান্য দিনের মতো পলাশ দোকানে যায়। কিছুক্ষণ পর মালতী টিভিতে দেখে, পলাশের দোকান যে ভবনে, তাতে আগুন লেগেছে। পলাশকে পাওয়া যায় না। নিমেষে তা বদলে দেয় তার জীবনের মোড়।
সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে চরকিতে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্ল্যাটফর্মটি এ ঘোষণা দেয়। যেখানে জানানো হয়, ৬ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার, রাত ৮টায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে চরকিতে। এরই মধ্যে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়েছে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ায়। ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরামা সেকশনে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি।
গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার শঙ্খ দাশগুপ্ত বলেন, ‘সিনেমায় মালতী চরিত্রটি সংগ্রামের। সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয় চরিত্রটিকে। দেশের অনেক নারীর জীবনেই এমন ঘটনা আছে। জীবনসংগ্রামের পাশাপাশি প্রচলিত কিছু নিয়মকেও প্রশ্ন করেছেন পরিচালক। মালতীর সমস্যা-সংগ্রামগুলো শুধু তার একার নয়, এগুলো দেশের মানুষের সমস্যা-সংগ্রাম। মালতী চরিত্রটি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর। বিশৃঙ্খল এই শহরে তাকে লড়াই করতে হয় শ্বশুরবাড়ি, সমাজ ও ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে। এর পাশপাশি আমি প্রশ্ন করতে চেয়েছি, একজন মানুষের অস্তিস্ব কি ডেথ সার্টিফিকেট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে?’
সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় গত ২০ ডিসেম্বর। পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত এ সিনেমার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে। সিনেমায় ‘মালতী’ হয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। এ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক হলো। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে নাটক, সিরিজে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। তবে প্রিয় মালতী সিনেমায় যেন আগের সব কাজ ছাড়িয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দর্শক ও সমালোচকেরা। নাটকের সেই ‘পাশের বাড়ি মেয়ে’ বা রোমান্টিক নায়িকা নন; বরং জটিল এক চরিত্রে, পুরো সিনেমাকে নিজের কাঁধে নিয়ে অনায়াসে হেঁটেছেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা ‘মালতী’ চরিত্রে পর্দায় এতটাই অসাধারণ, যেন নিজেকেই ছাপিয়ে গেছেন বলে বেশির ভাগ দর্শকের মন্তব্য। চোখের পানি মুছতে মুছতে হল থেকে বের হচ্ছেন দর্শক, এমন দৃশ্যও দেখা গেছে। সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে মেহজাবীন বলেন, ‘সিনেমা ভালো লাগবে, এ প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দর্শক এতটা ইমোশনাল হয়ে পড়বেন, আশা করিনি।’ এটি তাঁর জীবনের এযাবৎ করা সেরা চরিত্র বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অভিনেত্রী, পরিচালক ছাড়াও ফিচার ফিল্মের প্রযোজক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন নির্মাতা-প্রযোজক আদনান আল রাজীব। এর আগে অনেকগুলো ওটিটি কনটেন্ট প্রযোজনা করেছেন তিনি। এবার সিনেমা প্রযোজনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রিয় মালতীর গল্পটা এতটাই আলাদা, মনে হয়েছে, এই সিনেমা হওয়া দরকার; সেই তাগিদ থেকেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আর শঙ্খ ও তার ভালো সিনেমা বানানোর প্রতি যে চেষ্টা, তা সব সময়ই আমাকে আকৃষ্ট করেছে। একজন সহকর্মী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি মনে করি, একে অপরকে সমর্থন করা এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ফ্রেম পার সেকেন্ড ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি। ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল আসে সিনেমাটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ঢাকা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় সিনেমাটির শুটিং। সব কাজ শেষ করে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির ঘোষণা আসে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। এরপর ১৩ ডিসেম্বর হয় মুক্তির তারিখ ঘোষণা এবং ১৪ ডিসেম্বর আসে সিনেমাটির ট্রেলার। প্রেক্ষাগৃহের জন্য সিনেমাটি পেয়েছে ইউ গ্রেডের সেন্সর সার্টিফিকেট।