রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো কোনো দল এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাইছে না। আবার কোনো কোনো দল বলছে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে এ মুহূর্তে নতুন একটি সংকট তৈরি হতে দেওয়া ঠিক হবে না। কোনো কোনো দলের আশা, রাষ্ট্রপতি নিজে থেকেই পদত্যাগ করবেন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই—সম্প্রতি এই মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তুলেছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভও হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন নেতা। দলটি বলছে, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, সেটা বিএনপির কাছে কাম্য নয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মতও অনেকটা একই ধরনের। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে যা হচ্ছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না, এটা এখন অপ্রয়োজনীয় আলোচনা। এখনকার এজেন্ডা হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ। এখন এমন কোনো সংকট সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং নির্বাচনের পথকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে থাকার নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বলে মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তবে তাঁর মতে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে যা হচ্ছে, সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়। নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পদত্যাগের দাবি ঘিরে ৪০-৫০ জন বঙ্গভবনের সামনে যেসব হাস্যকর কর্মকাণ্ড করেছেন, তা সমর্থন করা যায় না। এ মুহূর্তে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বা সংকট তৈরি করা ঠিক হবে না। আপাতত রাষ্ট্রপতিকে না সরানোই উত্তম। যদি বিকল্প কিছু করতেই হয়, তাহলে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এবি পার্টি আশা করে, মো. সাহাবুদ্দিন নিজে থেকেই রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। দলটির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সকলকেই আমরা ফ্যাসিবাদের ধারক ও বাহক মনে করি। এই রাষ্ট্রপতির অধীনে শপথ নেওয়ার কারণে এমনিতেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার বিরাট একটা অংশের অসন্তোষ আছে। সে রকম একটি নাজুক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি বিভ্রান্তিমূলক দুই ধরনের বক্তব্য দিয়ে নিজেই সমস্যাকে জটিল করে তুলেছেন।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করেন, সরকার কী করতে চাইছে, সেটা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে করা উচিত।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবির প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। অবশ্য এর আগের দিন মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, এ পর্যায়ে এসে রাষ্ট্রপতির পদে থাকা সমীচীন নয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চান না।