সেঞ্চুরি উদযাপনের উপলক্ষ্যে তৈরি করেও দুই রানের আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ (৯৮)। একই মঞ্চে প্রথম দুই ম্যাচে রান না পাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজ আগ্রাসী ভঙ্গিতে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি উদযাপন করে আফগানদের আনন্দে ভাসান। শারজায় সোমবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে স্কোর বোর্ডে ২৪৪ রান তোলার পর বাংলাদেশ সিরিজ জয়ও ভেবে নিয়েছিল। উইকেটের বিবেচনায় বড় লক্ষ্য হলেও ব্যবধান গড়ে দেন গুরবাজ। ছিল বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া। তার সঙ্গে অসাধারণ এক ইনিংসে (৭০*) ছক্কায় জয় নিশ্চিত করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। দশ বল বাকি থাকতেই পাঁচ উইকেটের জয়ে ২-১ এ সিরিজও নিশ্চিত করে আফগানরা। সব মিলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয় তাদের। আর আফগানদের এটি টানা তৃতীয় সিরিজ জয়। চার উইকেট ও ব্যাটিংয়ে দারুণ ইনিংসে ম্যাচসেরা ওমরজাই। সিরিজসেরা হয়েছেন মোহাম্মদ নবী।
জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন পাঁচ রান। শরীফুল ইসলামের বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করে বুনো উল্লাসে মাতেন ওমরজাই। অথচ বিবর্ণ বোলিং ও বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়ায় লড়াই করার পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। রান তাড়ায় একপ্রান্ত আগলে রেখে আফগানিস্তানের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন গুরবাজ। তাকে একের পর এক সুযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। একাধিক জীবন পেয়ে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে ওমরজাইয়ের সঙ্গে তিনি গড়েন ১০০ রানের জুটি। গুরবাজ ফেরার পর মোহাম্মাদ নাবীকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন ওমরজাই। ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা দুজন ৪৮ বলে যোগ করেন ৫৮ রান। ওমরজাই ৭৭ বলে ৭০* ও নাবী ২৭ বলে ৩৪* রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন নাহিদ রানা ও মোস্তাফিজুর রহমান। অভিষেকে গতির পসরা সাজিয়ে নজর কাড়েন নাহিদ। উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ২৪ রান খরচ করেন নাসুম আহমেদ।
চোটে জর্জিত বাংলাদেশ শিবিরে প্রতি ম্যাচেই একাদশে পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় শেষ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যে ম্যাচ ছিল তার ১০০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হলেও ১৯ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে স্কোর করে ফেলে ৭২/৪! সেখান থেকেই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজকে লড়াইয়ে পুঁজি এনে দেন। শেষ বলে সেঞ্চুরির জন্য মাহমুদউল্লাহর প্রয়োজন তিন রান। ওমরজাইয়ের ফুল লেংথ বল অন সাইডে খেলেই দৌড়ে দুই রানের চেষ্টায় রানআউট হন তিনি। সেঞ্চুরি না হলেও মাহমুদউল্লাহর ৯৮ রানের সৌজন্যে চার উইকেটে ৭২ রান থেকে আট উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ। প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম নব্বই ছুঁয়ে সেঞ্চুরির আগে আউট হন ৩৮ বছর বয়সি মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া দলকে আড়াইশর কাছে নিতে বড় অবদান রাখেন মিরাজও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচে প্রথমবার দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে ১১৯ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার ১০৬ বলে করা হাফ সেঞ্চুরি সর্বশেষ ১৯ বছরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মন্থরতম। পঞ্চম উইকেটে মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে আসে ১৮৮ বলে ১৪৫ রান। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ ছাড়া আর কেউ ত্রিশ ছুঁতে পারেননি। আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।