একদিকে পাঠক বই উল্টেপাল্টে দেখছেন, অন্যদিকে চলছে স্টল তৈরির কাজ। অনেক জায়গায় ইট-বালু-ব্যানারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে দ্রুত হাতে কাজ করছেন কর্মীরা। আবার অনেক স্টল তৈরি হয়ে গেলেও সেখানকার সাজসজ্জা ও বই গোছাতে ব্যস্ত প্রকাশক। এ রকম ভিড়ভাট্টাহীন ও স্টল সাজসজ্জার ব্যস্তময় পরিবেশেই গতকাল শনিবার শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫।
বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ প্রদান ও প্রধান উপদেষ্টা মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বাঙালির প্রাণের মেলা। এর পর ধীরে ধীরে আসতে থাকেন বইপ্রেমী ও দর্শনার্থী।
গত তিন বছর বইমেলায় অংশগ্রহণের আবেদন করার পর এবারই প্রথম স্টল বরাদ্দ পেয়েছে প্রকাশনী সংস্থা আনন্দলোক। এতে খুশি হয়ে প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক হাসান বলেন, প্রথমবার অংশ নেওয়ায় আমাদের নিজেদেরও স্টল তৈরি থেকে শুরু করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তাই প্রথম দিনেই আমরা স্টল খুলতে পারিনি। তবে রোববার (আজ) থেকে আমরা বই বিক্রি শুরু করতে পারব।
প্রতিবারের মতো এবারও মেলা প্রাঙ্গণে ধুলাবালুর সমস্যা নিয়ে আলাপ তোলেন দর্শনার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তৈমুর বলেন, বইমেলায় এই ধুলাবালুর সমস্যা তো নতুন নয়। প্রথম দিনে কাজের জন্য বালু দেখে গেলাম। কিন্তু সব কাজ শেষ হয়ে গেলেও যদি এই বালু বা ধুলার সমস্যা থাকে, তাহলে আগেরবারের মতোই সমস্যায় পড়তে হবে। আশা করি, এ বছরের মেলায় হয়তো এমন সমস্যা থাকবে না।
ম্যাগনাম ওপাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার ফরিদী বলেন, মেলায় তো ধুলাবালুর সমস্যা প্রকট। আমি মেলার ভেতরে সব সময় যাই না। মাঝেমধ্যে গেলেও আমার স্টলের আশপাশে পানি ছিটিয়ে ধুলাবালু কিছুটা হলেও কমানোর চেষ্টা করি। সব প্রস্তুতি সম্পন্নের পরও প্রথম দিন স্টল খুলিনি। রোববার থেকে স্টল নিয়মিত খোলা থাকবে।
এবারের মেলায় ব্যানারে রঙিন ও নান্দনিক সব ক্যালিগ্রাফিসমৃদ্ধ বিভিন্ন ইসলামিক বইয়ের স্টল দেখা গেছে। এসব স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীর কিছুটা ভিড়ও দেখা গেছে। পুরো মেলা প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল লক্ষ্য করা গেছে। বইমেলার অনেক স্টলের পোস্টার ও ব্যানারে দেখা গেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ছবি সাঁটানো।
মেলায় ভিন্নধর্মী প্রকাশনী সংস্থা বইমই-এর স্বত্বাধিকারী তরুণ প্রকাশক ইমদাদুল হক ফয়সাল বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বইমেলায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। স্টল বরাদ্দে ও বিশেষত ধর্মীয় প্রকাশনী সংস্থাদের প্রতি কোনো ধরনের দলীয়করণ ও রাজনৈতিক খড়্গ পড়েনি। সবাই সমানভাবে মেলায় অংশ নিতে পেরেছে।
আজ মেলার দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে কবি হেলাল হাফিজ স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কুদরত-ই-হুদা। সুমন রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মৃদুল মাহবুব এবং সাইয়েদ জামিল।