ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেক গল্প উপন্যাস অনেক সিনেমাও দেখেছি, লাইলি মজনু শ্রী ফরহাদ, অনেকেরই গল্প ভাই ইতিহাস পড়েছি, কিন্তু বাস্তবে একজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে দেখলাম ।

এ যুগে শোকের মেয়াদ নাকি কম-বেশি তিন মাস। আর প্রেম এক পরাবাস্তব মরীচিকা। জীবনমুখী গানের জনপ্রিয় শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর গানে তো আরেক একধাপ এগিয়ে বলা হয়েছে, ‘ভালোবাসা আসলে তো একটা চুক্তি যেন অনুভূতি-টনুভূতি মিথ্যে’। কিন্তু আসলেই কি তাই? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে।
রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সাবেক শিক্ষক এটিএম মোস্তফার দিকে তাকালে জানা যায় ‘ভালোবাসা কারে কয়’। প্রায় ১৯ বছর ধরে প্রিয়তমার কবরকে সঙ্গ দিচ্ছেন এই প্রেমিক। উপজেলা সদরের চাঁন্দামারী গ্রামে কবরের পাশে বসে প্রার্থনা আর দোয়ায় তিনি স্মরণ করছেন প্রিয় স্ত্রীকে।
এটিএম মোস্তফার স্ত্রী রেখা বেগম ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান। স্ত্রীকে বাড়ির প্রবেশপথের পাশেই দাফন করা হয়। সেই থেকে স্ত্রীর কবরকে দৃষ্টিসীমার বাইরে ফেলে কোথাও যেতে চান না তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক এটিএম মোস্তফা এবং তার স্ত্রী রেখা বেগমের দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত সুমধুর। বিয়ের পর তারা একে অপরকে ছেড়ে কখনো রাত কাটাননি। মোস্তফা-রেখা দম্পতির দুই সন্তান। ছেলে রাজীব ফেরদৌস শুভ্র ও মেয়ে রুবাইয়া সুলতানা।
শুভ্র বলেন, মা মারা গেছেন ১৯ বছর। বাবা তাকে এখনো ভুলতে পারেননি। মায়ের কবরকে সঙ্গ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কবরকে চোখের আড়াল করে দূরে কোথাও যেতে চান না। জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে কখনো বাড়ির বাইরে গেলে দ্রুত তিনি ফিরে আসেন। ঘুরেফিরে মায়ের কবরের কাছে বসেন। রাত জেগে নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে দোয়া করেন।
এটিএম মোস্তফা নামের প্রেমিক হৃদয়ের মানুষটি বলেন, কত দিন হলো মানুষটা (স্ত্রী) চলে গেছে। তবে ভালোবাসা চলে যায় না। তার মৃত্যুর পর জীবনটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাকে কিছুতেই ভুলতে পারি না। তার মৃত্যুর পর আমি এ পর্যন্ত ৯৫ বার কোরআন খতম করেছি। সব সময় আল্লাহর কাছে তার জন্য জান্নাত কামনা করি।
এটিএম মোস্তফা আরো বলেন, আমার বাকি জিন্দেগি, এভাবেই স্ত্রীর কবরের পাশে বাকি সময়টা কাটিয়ে দিতে চাই ।
উপজেলার নওদাবস উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোবাশ্বের আলম লিটন বলেন, মোস্তফা স্যার সম্রাট শাহজাহানের মতো স্ত্রীর জন্য তাজমহল নির্মাণ করেননি। তবে স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *