দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধে ১৪ দলে। হতাশ হয়ে পড়েন শরিক দলগুলোর নেতারা। নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন বৈঠকও হয়নি। এতে প্রশ্ন ওঠে, ১৪ দলীয় জোট কি আছে? খোদ জোটনেত্রী শেখ হাসিনাকেও সেটির উত্তর দিতে হয়। এরপর গত ২৩ মে ১৪ দলের বৈঠকে সব ক্ষোভ উগরে দেন জোট শরিকরা। জোটনেত্রী শেখ হাসিনা সবার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন, চেষ্টা করেন ক্ষোভ প্রশমনের। জোটগত পথচলার প্রয়োজন তুলে ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন।

বৈঠকের পর ক্ষোভ উগরে দিয়ে সন্তুষ্ট শরিক নেতারা। তবে পরবর্তী কর্মসূচিতে নজর রাখবে শরিক দলগুলো। তাদের কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় বা সমান মর্যাদা দেওয়া হয় কি না, এসব দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। জোট নেতারা চান, ১৪ দল আগের মতো সক্রিয় হোক। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকুক। ইনডোর-আউটডোরে সভা হোক।

জোট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে সমন্বয়কের নেতৃত্বে বৈঠকে বসবেন জোট নেতারা। সেই বৈঠকে কর্মসূচি নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে মাঠে নামবেন তারা।

তবে শরিক দলগুলোর নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে জোট সমন্বয়ক প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম ঘন ঘন সভা করতেন, তাদের ডাকতেন। তার মৃত্যুর পর জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তাকে বললেও সভা ডাকেন না, কোনো কার্যক্রম নেই। এ বিষয়টি তারা জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছেন। তিনি বলে দিয়েছেন, যাতে নিয়মিত সভা হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে যেন মাঠে সক্রিয় থাকা হয়।

১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন হয়েছে। নতুন সরকার এসেছে। পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। ১৪ দলের দীর্ঘদিনের পথযাত্রায় কিছু সমস্যা আছে, কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব আছে। ১৪ দলের দরকার আছে কি নেই, সে ব্যাপারটা এই বৈঠকের (২৩ মে) মধ্য দিয়ে আপাতত নিষ্পত্তি হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৪ দলের দরকার আছে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব কিছু বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। সে রকম একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। সামনের দিকে আরও উপর্যুপরি বৈঠক হবে। তার ভিত্তিতে একটা কাজের পদ্ধতি নির্ধারণ হবে।

জোটের আরেক শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘আমাদের হতাশা যা ছিল, আমরা জোটনেত্রীকে বলেছি। প্রাথমিক সন্তুষ্টি হলো- কথা বলতে পেরেছি। ১৪ দলের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, দল বা উনি (শেখ হাসিনা) প্রয়োজন মনে করেন কি না, আর মনে করলেও উনার দলের নেতাদের কথাবার্তায় সংযত থাকা উচিত। ভাষা ঠিক রাখা উচিত। এটা উনি স্বীকার করেছেন যে, জোটের প্রয়োজন আছে। তিনি এও বলেছেন, আগামী দিনে প্রচণ্ড চাপ আছে বহির্বিশ্বের। তাদের উৎখাত করার চেষ্টা চলছে। সেজন্য ১৪ দলীয় জোট নিয়েই এগোতে হবে।

নজিবুল বশর আরও বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের কর্মসূচির বিষয়ে আমরা বলেছি। আমি অভিযোগই করেছি। আগে নাসিম ভাই থাকতে জোটের সভা ডাকা হতো। কারো অপেক্ষায় থাকতেন না। এখন আমু ভাই আমরা বললেও সভা ডাকেন না। জোটনেত্রী জোট সমন্বয়ককে শিগগিরই সভা ডাকতে বলেছেন। এরই মধ্যে সভা ডাকারও কথা। এখন কী করে দেখি। এটা মনে রাখতে হবে, ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন। উনারা (আওয়ামী লীগ) সক্রিয় না হলে আমাদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই।

জোট সক্রিয় করা বা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়ে এস কে শিকদার বলেন, ‘জোট সক্রিয় করার পক্ষে জোটনেত্রীও বলেছেন। এটার প্রস্তাব আছে। আমাদের কাছে মনে হয়, কার্যকর কিছু হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *