কংক্রিটের এই নগরে একটু শীতল ছায়ার বড়ই অভাব। চলতি বছর টানা তীব্র তাপপ্রবাহে সেটি টের পাওয়া যাচ্ছে আরও। তপ্ত রোদে ক্লান্ত শরীরটাকে আরাম দিতে মেলে না গাছের ছায়া। মিলবে কীভাবে? আমরা তো ছায়াদায়ী বড় গাছই রাখিনি। গাছ থাকতে বুঝিনি গাছের মর্ম। একেক সময় একেক উপলক্ষে সাবাড় হয়েছে গাছ। কখনো সিটি করপোরেশন কখনো পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের করাত।

এক সময় ধানমন্ডির সাতমজিদ রোডের সড়ক বিভাজকে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ ছিল। তপ্ত রোদে সড়কে যানজট, সিগন্যালে আটকে থাকা যাত্রীদের ছায়া দিতো। চলার পথে সবুজ গাছপালায় তাকিয়ে চোখের প্রশান্তি পেতেন পথচারীরা। কিন্তু এক বছর আগে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সব গাছ সাবাড় করেছে খোদ সিটি করপোরেশন। পরে সমালোচনা সামাল দিতে লাগানো হয়েছে বাগান বিলাসসহ কয়েক ধরনের ফুলগাছ।

একইভাবে আগে মতিঝিল থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর পর্যন্ত সড়ক বিভাজকে সারিবদ্ধভাবে ছিল হাজারো গাছ। মেট্রোরেল নির্মাণের সময় সব গাছ কেটে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। এখন চলার পথে সড়ক বিভাজকে শুধু কংক্রিটের খুঁটি চোখে পড়ে। সড়ক বিভাজকে ছায়া দেবে এমন গাছের পরিবর্তে শোভা পেয়েছে বাগান বিলাসসহ বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার গাছ।

চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। আর যারাই সড়কে বের হচ্ছেন, তপ্ত রোদ থেকে বাঁচার জন্য গাছের ছায়া খুঁজছেন। নাগরিকদের অভিযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নের নামে নগরে গাছপালা কেটে মরুভূমির পরিবেশ তৈরি করেছে খোদ সরকারে বিভিন্ন সংস্থা।

পরিবেশবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নগরে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে গণহারে গাছপালা কাটায় ঢাকা তার বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন তীব্র তাপপ্রবাহে গাছ কাটার খেসারত দিচ্ছেন নাগরিকরা। এ বিষয়ে চরম উদাসীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এভাবে চললে ভবিষ্যতে নগরে তাপপ্রবাহ ক্রমেই বাড়বে।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে থেকে আবাহনী খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার। এক বছর আগে এই সড়কের বিভাজকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দুই হাজার গাছ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিলে হঠাৎ একদিন রাতে সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা শুরু করে ডিএসসিসি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ধানমন্ডির বাসিন্দারা। টানা কয়েক দিন গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন, ডিএসসিসি মেয়রকে স্মারকলিপি দেন তারা। কিন্তু তারপরও সিটি করপোরেশন সব গাছ কেটে ফেলে। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, এখন সাতমসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকের ওপর রঙ্গন, কামিনী, বাগান বিলাস লাগিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু চলার পথে পথচারী বা যানবাহনে থাকা যাত্রীদের ছায়া দেবে সড়ক বিভাজকে এমন কোনো গাছ দেখা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *