২০১৯ সালের ১৯ মার্চ। রাজধানী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের অপর পাশে রাস্তা পারের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী। বেপরোয়া গতিতে এসে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এর দুদিন পর ওই স্থানে ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন এ জায়গাটিতে একটি পদচারী সেতুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় শপিংমল, বসুন্ধরার মতো কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করা আবাসিক এলাকা থাকায় প্রচুর মানুষ সেখানে প্রতিদিন রাস্তা পারাপার করে। অথচ একটি পদচারী সেতু পাওয়ার জন্য আবরারের জীবন যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ব্রিজটি কতটা প্রয়োজন ছিল তা স্পষ্ট হয় উদ্বোধনের কয়েকদিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে। সেখানে দেখা যায়, পুরো ফুটওভারব্রিজ জুড়ে শুধু মানুষ, সিঁড়িতে দীর্ঘ লাইন ধরে উঠছে মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এতদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতো।

এমন ঘটনা রয়েছে আরও কয়েকটি। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরে সেখানে আন্ডারপাস স্থাপন করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান মারা যান। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখানে একটি পদচারী সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক প্রগতি সরণির বাড্ডা লিংক রোড, হোসেন মার্কেট, সুবাস্তু, রামপুরাসহ কয়েকটি পয়েন্টেও পদচারী সেতু একান্ত প্রয়োজন। বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হলেও নেই কোনো পদচারী সেতু। এলাকাবাসী কিংবা এখানে নিয়মিত চলাচলকারীরা বিভিন্নভাবে দাবি করে আসছেন সেতুর। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। পথচারীরা বলছেন, আবরার, রাজীবদের মতো কারও প্রাণ না গেলে এখানে পদচারী সেতু দেবে না সিটি করপোরেশন।

সরেজমিনে রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৯টার পর মধ্যবাড্ডায় গিয়ে দেখা যায়, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের বিপরীত পাশের ফুটপাতে জেব্রা ক্রসিং বরাবর দাঁড়িয়ে আছেন ১৪-১৫ জন পথচারী। কিন্তু সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। দ্রুতগতিতে ছুটছে যানবাহন। প্রায় চার মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও সড়ক পার হতে পারছিলেন না তারা। এক পর্যায়ে কয়েকজন পথচারী হাতের ইশারায় যানবাহনের গতি কমিয়ে একে একে সড়ক পার হন।

সকাল পৌনে ১০টায় মধ্য বাড্ডার হোসেন মার্কেট সিগন্যালে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এ মার্কেটের সামনে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে পথচারীদের পারাপারের ব্যবস্থা রেখেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সেখানেও জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। দুই পাশ থেকে হাতের ইশারায় যানবাহনের গতি কমিয়ে শত শত পথচারীকে সড়ক পার হতে দেখা যায়। কারও কারও এমন হয়েছে যে এক সেকেন্ড হিসাব এদিক-সেদিক হলে ঘটে যেত দুর্ঘটনা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *