মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়নার (৪৮) পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাদের সবারই রয়েছে বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিকত্ব। মাকসুদুর ওরফে ডায়না নিজেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তারও। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশেই থাকতেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় নিজের একতলা বাড়িতে একার বসবাস ছিল তার।

মাকসুদুর ওরফে ডায়না জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেকে শারীরিকভাবে পরিবর্তন করেন। এরপর এই রূপান্তরকামী নারী ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েন সমকামিতায়। তিনি যে বাসায় থাকতেন এর কাছাকাছিই ছিল তার বোন মরিয়মের বাসা। সেই বাসায় গৃহপরিচারকের কাজ করতেন শোয়েব আক্তার লাদেন নামের এক যুবক। এক পর্যায়ে বোনের বাসার গৃহপরিচারক লাদেনের সঙ্গে জোরপূর্বক সমকামিতায় জড়াতে চান ডায়না। পরে তিনি লাদেনের হাতেই খুন হন।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই মরিয়মের বাসায় গৃহপরিচারকের কাজ করতেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাশিঘাটের বাসিন্দা জাহেদ আলীর ছেলে লাদেন। ওই বাসায় কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতেন তিনি। এক দশক আগে সেখানেই বাড়ির মালিক মরিয়মের ভাই মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়নার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ডায়না তখন বোনের বাসার পাশেই গোলাপবাগের একতলা বিশিষ্ট নিজ বাড়িতে একা বসবাস করতেন।

ডায়নার বাসায় পানির সমস্যা ছিল। সে কারণে পানি দিয়ে আসতে মাঝেমধ্যেই সেই বাসায় যাওয়া-আসা করতে হতো লাদেনকে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান ডায়না। তিনি বিভিন্ন সময়ে বোনের বাসা থেকে লাদেনকে ডেকে এনে সমকামিতায় বাধ্য করতেন। লাদেনের নগ্ন ভিডিও ধারণও করতেন। সমকামিতা থেকে বাঁচতে একপর্যায়ে মরিয়মের বাসার কাজ ছেড়ে দেন লাদেন। চলে যান কদমতলী থানার সাদ্দাম মার্কেট এলাকায়। এরপর বিয়ে করে স্ত্রীসহ সেই এলাকায় বসবাস শুরু করেন।

গোলাপবাগে মরিয়মের বাসার কাজ ছেড়ে আসার পর নতুন পেশা হিসেবে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ বেছে নেন লাদেন। কিন্তু তখনও তার পিছু ছাড়েননি ডায়না। হঠাৎ একদিন ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে লাদেনকে গোলাপবাগের নিজ বাসায় ডেকে নেন ডায়না। এরপর সমকামিতার জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে সেখানেই তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন শোয়েব আক্তার লাদেন।

হত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত ডায়নার মামাতো ভাই কাজী জামাল হোসেন (৫৮)। মামলার তদন্ত শেষে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুকিত হাসান। চার্জশিটেই হত্যার নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তবে ডায়না সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন তা মানকে নারাজ মামলার বাদী কাজী জামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমার ভাই মুসলিম পরিবারের সন্তান। সে আমেরিকায় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিল। ছোটবেলায় আমি তাকে সুন্নতে খতনার সময় ধরে রেখেছিলাম। সে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন সংসারও করে। তার চলাফেরা কিছুটা মেয়েলি স্বভাবের হওয়ায় তাকে ক্লীব (পুরুষত্বহীন) লিঙ্গ বলছে পুলিশ। আমার ভাই কখনোই ক্লীব ছিল না। আমি চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আই.ও) মুকিত হাসান বলেন, মামলায় আসামি শোয়েব আক্তার লাদেন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না যে সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন আসামির জবানবন্দিতে সে তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে আসামি লাদেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *